Sunday, 21 February 2016

ইসলামে 'নারীর সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার'

ইসলামে 'নারীর সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার' বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যে বিষয়টি নিয়েপাশ্চাত্য খুবই শোর গোল করছে।
যার সূত্র ধরে ইসলাম বিরোধীঅপশক্তিগুলোও ইসলামের উপর কালিমা লেপনের অপচেষ্টায় আদাজলখেয়ে মাঠে নেমেছে, পশ্চিমাদের এজেন্ট, কুফরী শক্তির দালালরাইসলাম ও মুসলিমদের তাহযীব-তামাদ্দুনকে সমূলে ধ্বংস করে মুসলিমউম্মাহকে চিরতরে পঙ্গু করার জন্য যেই ভয়ংকর মিশন নিয়ে মাঠেনেমেছে তার নাম হচ্ছে -নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা।আর এ বিষয়টির ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী কি সে সম্পর্কেঅনেকেই অনেকভাবে, অনেক আঙ্গিকে লিখেছেন।বর্তমান পাশ্চাত্য এবং ইসলাম বিদ্বেষী অপশক্তি আজ অত্যন্ত কৌশলেমুসলিম উম্মাহর নারীদেরকে টার্গেট করেছে। তারা মুসলিমপারিবারিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দেয়ার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যনারীদেরকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। অধিকারকিংবা আর্থিক স্বনির্ভরতার টোপ ফেলে তারা সহজ-সরল মুসলিমরমণীদেরকে হিজাব ও পর্দার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান তাদের ঘরথেকে তাদেরকে মাঠে ময়দানে টেনে আনার অপচেষ্টা করছে।বাস্তবতার মাথা খেয়ে স্বার্থান্ধ একদল অপরদিকে বলে চলেছে যে,ইসলাম নারীকে শেকল পরিয়ে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করেরেখেছে। ইসলাম নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিতকরেছে। তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে জুলুমের বোঝা(নাউযুবিল্লাহ।)নারী সম্পর্কিত এধরণের হাজারো অভিযোগ আজ চাপিয়ে দেয়াহচ্ছে ইসলামের উপর। বাঁধ ভাঙ্গা স্রোতের মতো বিষোদ্গারের ঢলনামানো হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হলো এর সম্পূর্ণ বিপরীত। 


 আমি বলবো,কেবলমাত্র ইসলামই এমন এক দীন বা জীবন ব্যবস্থা, যা নারী জাতিকে তাদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। তাদেরকে সমাসীন করেছে সম্মানও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে। আর হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি নারীদের সকল অধিকারআদায় করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সমাজের বুকে নারীদের সম্মানও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন। যদি আমরা ইসলাম পূর্বআইয়্যামে জাহেলিয়াত ও ইসলাম পরবর্তী সময়ের নারীদের অবস্থা ওঅবস্থানের দিকে তাকাই তাহলে বিষয়টি দিবালোকের মতো সুস্পষ্টহয়ে যাবে।নারী জন্মের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম:ইসলাম আসার পূর্বে সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতে নারীদেরকেসামাজিক মর্যাদা দেয়া তো দূরের কথা তাদের বেঁচে থাকারঅধিকার পর্যন্ত ছিলো না। কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণের কথা শ্রবণ করারসাথে সাথেই সকলের মুখ কালো হয়ে যেতো। তাকে জীবন্তমাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য সকলে আয়োজনে ব্যতি ব্যস্ত হয়ে উঠতোএবং এই কন্যা সন্তানকে মাটিতে জীবন্ত প্রোথিত করাকেইনিজেদের জন্য সম্মান, মর্যাদা ও পুন্যের কাজ বলে মনে করতো।


 জাহেলী যুগের সেই সময়কার ভয়বহ এই অবস্থার কথা তুলে ধরে পবিত্রকুরআনে ইরশাদ হয়েছে  ,ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺑُﺸِّﺮَ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺄُﻧْﺜَﻰ ﻇَﻞَّ ﻭَﺟْﻬُﻪُ ﻣُﺴْﻮَﺩًّﺍ ﻭَﻫُﻮَ ﻛَﻈِﻴﻢٌ . ﻳَﺘَﻮَﺍﺭَﻯ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﻣِﻦْ ﺳُﻮﺀِ ﻣَﺎ ﺑُﺸِّﺮَ ﺑِﻪِ ﺃَﻳُﻤْﺴِﻜُﻪُﻋَﻠَﻰ ﻫُﻮﻥٍ ﺃَﻡْ ﻳَﺪُﺳُّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘُّﺮَﺍﺏِ ﺃَﻟَﺎ ﺳَﺎﺀَ ﻣَﺎ ﻳَﺤْﻜُﻤُﻮﻥَ

"আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন তারচেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকেযে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপনকরে। আপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতেফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!” (সুরানাহল: আয়াত ৫৮, ৫৯)
 ইসলাম পূর্ব আরব সমাজে নারীদের অবস্থা এমনই ছিলো। এমনকি ইসলামব্যতীত অন্য সকল ধর্মে আজ পর্যন্ত নারী জাতির অধিকারের কোনোস্বীকৃতি দেয়া হয়নি।হিন্দুধর্মে নারী জাতিকে মৃত্যু, নরক, সর্প, বীষ ও আগুন থেকেওমারাত্মক বলা হয়েছে। স্বামী ছাড়া নারী জাতির আলাদাকোনো অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় নি। যার কারণে স্বামী মারাগেলে স্ত্রীকেও তার স্বামীর সাথে সহমরণে যেতে বাধ্য করার কথাবলা হয়েছে।খৃষ্টান ধর্মে নারী জাতিকে চরম লাঞ্চনার বস্তু বলে আখ্যায়িত করাহয়েছে। তাই তো খৃষ্টান পাদ্রী মি: সেন্ট টার্টুলিয়ামের মতে,নারী হচ্ছে বন্য জন্তুর চেয়েও অধিক বিপদজনক। অন্য আরেক পাদ্রীসেন্ট ক্রিয়ান নারীকে বীষধর সাপের সাথে তুলনা করে তার থেকেদূরে সরে থাকতে বলেছেন। সপ্তদশ শতকে খৃষ্টধর্মের রাজধানী রোমেবিত্তবানদের একটি কাউন্সিল সমবেত সকল শীর্ষ ব্যক্তি এই মর্মেসর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছিল যে, নারীর কোন আত্মা নেই।ইহুদী ধর্মে নারীকে পুরুষের জন্য প্রতারক বলা হয়েছে। তাদের মতেএকজন সতী নারীর চেয়ে একজন পাপিষ্ট পুরুষ বহু গুণে শ্রেষ্ঠ।বৌদ্ধধর্মে কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করাকে অলক্ষণীয় বলে মনে করা হয়।নারীর কোনো অধিকার আছে বলে স্বীকৃতি দেয় না।এভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মেই নারী জাতিকে পাপিষ্ট,অলুক্ষুণে, অপয়া ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকেকোনো অধিকার দেয়া তো দূরের কথা, তাদেরকে মানুষ বলেইস্বীকার করা হয়নি। তারা নারীদেরকে কেবলমাত্র ভোগের পণ্যহিসেবেই গণনা করতো।
-এমনিভাবে সর্বত্রই যখন নারী জাতির এমনলাঞ্চনা-গঞ্জনা আর অসম্মান ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে ইসলামএসে তৎকালীন সেই বর্বর যুগের অমানুষিক জুলুম থেকে নারীকে মুক্তকরেছে। ইসলামই একমাত্র দীন -যা নারী জাতিকে ফিরিয়েদিয়েছে তাদের যথাযথ অধিকার।ইসলাম এসে ধাপে ধাপে নারী জাতিকে তাদের জীবনের প্রতিটিক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। যেইসমাজে নারী জন্মই পাপ বলে গণ্য হতো সেখানে ইসলাম সর্বপ্রথমইনারীজন্মের অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারী সন্তানকে হত্যাকারীদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে।
ঘোষণাকরেছে,ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﻟْﻤَﻮْﺀُﻭﺩَﺓُ ﺳُﺌِﻠَﺖْ. ﺑِﺄَﻱِّ ﺫَﻧْﺐٍ ﻗُﺘِﻠَﺖْ“আর স্মরণ করো সেই দিনের কথা! যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকেজিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?” (সুরাতাকউইর, আয়াত ৮-৯)
কন্যা সন্তানের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম:সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে এটি নির্ধারণ করেন স্বয়ং মহানআল্লাহ। তিনি যাকে চান তাকেই নির্দিষ্ট লিঙ্গের সন্তান দানকরেন। কাউকে আবার নি:সন্তান করে রাখেন। সুতরাং নি:সন্তানদেরতুলনায় কন্যা সন্তানের অভিভাবকগণ যে কতো অকল্পনীয় মর্যাদারঅধিকারী এবং কন্যা সন্তানও যে সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান হতে পারে সেসম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,

“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন।তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবংযাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” (সুরাশু’রা: আয়াত ৪৯, ৫০)

 কুরআনের পাশাপাশি হাদীসের মাঝেও মহানবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানদেরকে খুবই সম্মান ও মর্যাদারউপলক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
 ইরশাদ হয়েছে,“ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত; তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির একটি মেয়ে আছে আরসে তাকে তুচ্ছ মনে করে নাই, অপমানিত করে নাই এবং ছেলেদেরউপর প্রাদান্য দেয় নাই। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশকরাবেন।” (সুনানে আবু দাউদ)
আরো ইরশাদ হয়েছে, “আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত তিনিবলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যেব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তান সাবালক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল সেকেয়ামতের দিবসে আমার সাথে থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,ﻋﻦ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ﻳﻘﻮﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ " ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺛﻼﺙ ﺑﻨﺎﺕ ، ﻓﺼﺒﺮﻋﻠﻴﻬﻦ ﻭﺃﻃﻌﻤﻬﻦ ﻭﺳﻘﺎﻫﻦ ﻭﻛﺴﺎﻫﻦ ﻣﻦ ﺟﺪﺗﻪ ، ﻛﻦ ﻟﻪ ﺣﺠﺎﺑﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ " ‏(ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ )“উকবা ইবনে আমের হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনিবলেন; যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে অত:পর সে তাদের নিয়েধৈর্য্য ধারন করে এবং তাদেরকে ভরণ-পোষণ দিয়ে খাওয়ায় পানকরায় তার নিজ সম্পদ থেকে, ক্বিয়ামতের দিবসে ঐ কন্যা সন্তানগুলোতার জন্য জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।” (সুনানে ইবনেমাজা)


আরো ইরশাদ হয়েছে,ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻯ ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﻣﻦ ﻋﺎﻝ ﺛﻼﺙ ﺑﻨﺎﺕ ﻓﺄﺩﺑﻬﻦﻭﺯﻭﺟﻬﻦ ﻭﺃﺣﺴﻦ ﺇﻟﻴﻬﻦ ﻓﻠﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏) ‏(ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ )“আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত: তিনি বলেল, রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তানআছে, সে তাদেরকে আদব শিক্ষা দিয়েছে এবং বিবাহ দিয়েছেএবং তাদের সাথে সদাচরন করেছে, তার জন্য রয়েছেজান্নাত।” (সুনানে আবু দাউদ)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,ﺃﻛﻤﻞ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﺃﺣﺴﻨﻬﻢ ﺧﻠﻘﺎ. ﻭﺧﻴﺎﺭﻛﻢ ﺧﻴﺎﺭ ﻟﻨﺴﺎﺋﻪ ﻭﺑﻨﺎﺗﻪ“পরিপূর্ণ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি, যার আখলাক-চরিত্র উত্তম। আরতোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রী-কন্যাদের কাছেউত্তম।”"সম্মান ও মর্যাদায় নারী-পুরুষকে সমান ঘোষণা করেছে ইসলাম:মানব সমাজে নারী জন্মের অধিকার প্রতিষ্ঠা, কন্যা সন্তানেরঅধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার পর ইসলাম সম্মান ও মর্যাদারক্ষেত্রেও নারী- পুরুষকে সমান ঘোষণা করেছে। জন্মগতভাবে নারী-পুরুষ আল্লাহর কাছে সমান বলে, নারীকে সম্মান ও মর্যাদার দিকথেকে পুরুষের সমকক্ষ ঘোষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। 

ঘোষণাকরেছেন,ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﻔْﺲٍ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٍ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺯَﻭْﺟَﻬَﺎ ﻭَﺑَﺚَّ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ ﺭِﺟَﺎﻟًﺎ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀًﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺗَﺴَﺎﺀَﻟُﻮﻥَ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺭَﻗِﻴﺒًﺎ“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টিকরেছেন এক উৎস থেকে। আর তা থেকে তোমাদের স্ত্রীদেরকেওসৃষ্টি করেছেন। এরপর তা থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আরতোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছেচাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহতোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।” (সূরা নিসা, আয়াত ০১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﻭَﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻛُﻢْ ﺷُﻌُﻮﺑًﺎ ﻭَﻗَﺒَﺎﺋِﻞَ ﻟِﺘَﻌَﺎﺭَﻓُﻮﺍ ﺇِﻥَّ ﺃَﻛْﺮَﻣَﻜُﻢْ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺗْﻘَﺎﻛُﻢْহে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছিআর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতেতোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছেসেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।(সুরা আল-হুজরাত: ১৩)

আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ ও সফল হওয়ার মানদন্ড নির্ধারণ করা হয়েছেতাকওয়া তথা আল্লাহভীতিকে। তাই একজন নারী একজন পুরুষ হতেওশ্রেষ্ঠ হতে পারে। উপরের আয়াতে এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম:নারী-পুরুষ বালেগ হওয়ার পর উভয়েই উভয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে।কিন্তু এটি যেনো তেনোভাবে না করে এজন্য ইসলাম বিবাহের মতোসুন্দর একটি বিধান দিয়েছে। আর এই বিবাহের মাধ্যমে আসলে মূলত:ইসলাম নারীদেরকেই লাভবান করেছে। দিয়েছে সম্মান ও মর্যাদারএক শীর্ষ চূড়া।

বিবাহ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে,ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﻔْﺲٍ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٍ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺯَﻭْﺟَﻬَﺎ ﻟِﻴَﺴْﻜُﻦَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ“তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তিথেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সেতার নিকট প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা আরাফ, আয়াত ১৮৯)

বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রাকৃতিক চাহিদা বৈধ পন্থায় পূর্ণকরে। পারিবারিক জীবনে প্রশান্তি লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে:ﻭَﻣِﻦْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﺃَﻥْ ﺧَﻠَﻖَ ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ ﻟِﺘَﺴْﻜُﻨُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻣَﻮَﺩَّﺓً ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﺂﻳَﺎﺕٍﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَআর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্যতোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদেরকাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়াসৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য,যারা চিন্তা করে। (সুরা রূম: আয়াত ২১)

আরো ইরশাদ হয়েছে,ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺭُﺳُﻠًﺎ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺔً“আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবংতাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। (সুরা রা’দ: আয়াত ৩৮)অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে:ﻫُﻦَّ ﻟِﺒَﺎﺱٌ ﻟَّﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﻟِﺒَﺎﺱٌ ﻟَّﻬُﻦَّ“তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্যে পরিধেয় আর তোমরা তাদেরজন্যে পরিধেয়।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

বিবাহের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।নারী পুরুষের ইজ্জত-সম্ভ্রম হিফাজত হয়। পারিবারিক শান্তি ও সুন্দরজীবন লাভ করা যায়। এছাড়াও বিবাহের মাধ্যমে সামাজিকপর্যায়ে অনেক সুফল পাওয়া যায়। এজন্যেই মহানবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীর ভরু-পোষণ দিতে সক্ষম সকল যুবককেবিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻗﺎﻝ ﻟﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ‏( ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﺸﺒﺎﺏ ﻣﻦ ﺍﺳﺘﻄﺎﻉ ﺍﻟﺒﺎﺀﺓﻓﻠﻴﺘﺰﻭﺝ ﻓﺈﻧﻪ ﺃﻏﺾ ﻟﻠﺒﺼﺮ ﻭﺃﺣﺼﻦ ﻟﻠﻔﺮﺝ ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻪ ﻭﺟﺎﺀ“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যেযারা স্ত্রীদের ভরু-পোষণের সক্ষমতা রাখে তারা যেন বিয়ে করেফেলে। কেনন এটা চোখের প্রশান্তি দানকারী ও লজ্জাস্থানেরহিফাজতকারী। আর যারা স্ত্রীদের ভরু-পোষণের সামর্থ্য রাখে না,তারা যেন রোজা রাখে, কেননা এটা তাদের উত্তেজনাকে হ্রাসকরবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৭৮)

যুবকদেরকে বিবাহের ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য বিবাহেরফজীলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণাকরেন,ﺇﺫﺍ ﺗﺰﻭﺝ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻓﻘﺪ ﺍﺳﺘﻜﻤﻞ ﻧﺼﻒ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻓﻠﻴﺘﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﺍﻟﺒﺎﻗﻲ“হযরত আনাস রা. থেকেব বর্ণিত, যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করে, তখন সেযেন তার অর্ধেক ঈমানকে পূর্ণ করে ফেললো। এখন বাকি অর্ধেকেরব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।” (মিশকাত শরীফ: হাদীস নং৩০৯৭)

স্ত্রীদের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামইরশাদ করেছেন:ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻌﺎﺩﺓ“উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যর পরিচায়ক।” (মুসলিম শরীফ)বৈরাগী জীবনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,ﺗَﺰَﻭَّﺟُﻮﺍ ﻓَﺈِﻧِّﻰ ﻣُﻜَﺎﺛِﺮٌ ﺑِﻜُﻢُ ﺍﻷُﻣَﻢَ ﻭَﻻَ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﻛَﺮَﻫْﺒَﺎﻧِﻴَّﺔِ ﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯ“আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা বিবাহ কর, কেননা আমিতোমাদের নিয়ে উম্মতের আধিক্যের উপর গর্ববোধ করব। এবং তোমরাখৃষ্টান বৈরাগ্যদের মত হয়ো না।” (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পুরুষদেরকে নেককার স্ত্রী ও নেক সন্তানকামনা করা শিখিয়েছেন এভাবে,ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ“আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ওসন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে।” (সুরা ফুরক্বান,আয়াত ৭৪)

অধিক খরচের গ্যারাকলে পরে পুরুষরা যেনো বিবাহ বিমুখ না হয়,সেজন্য ইসলাম বিবাহের ক্ষেত্রে বাহুল্য খরচ বর্জনের কথা বলেছে।বাহুল্য খরচ বর্জিত বিবাহকেই সবচেয়ে বেশী বরকতপূর্ণ ও উত্তম বিবাহবলে ঘোষণা করা হয়েছে হাদীসের মাঝে। ইরশাদ হয়েছে,ﺇﻥ ﺃﻋﻈﻢ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ ﺑﺮﻛﺔ ﺃﻳﺴﺮﻩ ﻣﺆﻧﺔহযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি বরকত ও কল্যাণময়বিবাহ হচ্ছে সেটি, যেখানে খরচ কম হয় (অহেতুক খরচ হয়না)।” (বায়হাকী, ঈমান অধ্যায়)

বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়েই নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করলেওইসলাম নারীদের জন্য বোনাস পাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। পুরুষের উপরবিবাহের সময় স্ত্রীদের জন্য মহর দেয়া ফরজ করেছে। ঘোষণা করেছে,ﺍﻧْﻜِﺤُﻮﻫُﻦَّ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺃَﻫْﻠِﻬِﻦَّ ﻭَﺁﺗُﻮﻫُﻦَّ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ“সুতরাং তোমরা তাদেরকে তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমেবিবাহ কর এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহর দিয়েদাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ২৫)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﺻَﺪُﻗَﺎﺗِﻬِﻦَّ ﻧِﺤْﻠَﺔً“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়েদাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)


বিবাহের পর স্ত্রীদের সাথে সর্বদা সদাচারণ বজায় রাখার নির্দেশদিয়ে ইসলাম ঘোষণা করেছে,ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ“আর তোমরা তাদের সাথে সদাচারণ করো।” (সূরা নিসা: আয়াত ১৯)

নিজে ভালো খাবে, উত্তম পোষাক পড়বে আর স্ত্রীদেরকে নিম্নমানের জীবন ধারণে বাধ্য করার জাহেলি মানসিকতাকে সমূলেবিনাশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,ﺃَﺳْﻜِﻨُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﺳَﻜَﻨْﺘُﻢْ ﻣِﻦْ ﻭُﺟْﺪِﻛُﻢْ“তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানেতাদেরকেও বাস করতে দাও।” (সূরা তালাক, আয়াত ৬)

নারীর নিজের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি সন্তানের দায়িত্বওস্বামীর কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,ﻟِﻴُﻨْﻔِﻖْ ﺫُﻭ ﺳَﻌَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺳَﻌَﺘِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻗُﺪِﺭَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭِﺯْﻗُﻪُ ﻓَﻠْﻴُﻨْﻔِﻖْ ﻣِﻤَّﺎ ﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ“বিত্তশালীরা যেনো সামর্থানুযায়ী স্ত্রী-সন্তানের উপর ব্যয় করে।সীমিত উপার্জনকারীরা আল্লাহর দেয়া অর্থানুপাতে ব্যয়করবে।” (সূরা তালাক, আয়াত ৭)

পুরুষদের উপর নারীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছে,ﻭَﻟَﻬُﻦَّ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻟِﻠﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﺩَﺭَﺟَﺔٌ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰِﻳﺰٌ ﺣَﻜُﻴﻢٌ“নারীদের উপর যেমন তোমাদের কিছু অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনিতোমাদের উপরও তাদের কিছু অধিকার রয়েছে। স্ত্রীর উপর পুরুষেরমর্যাদা। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (সূরা বাকারা :আয়াত ২২৮)

নারীদেরকে দূর্বল ও অসহায় পেয়ে যাতে করে কেউ তাঁদের উপর জুলুম ওঅত্যাচার না করে সেজন্যে ইসলাম ঘোষণা করেছে,ﻭَﻻَ ﺗُﻤْﺴِﻜُﻮﻫُﻦَّ ﺿِﺮَﺍﺭًﺍ ﻟِّﺘَﻌْﺘَﺪُﻭﺍْ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻔْﻌَﻞْ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻓَﻘَﺪْ ﻇَﻠَﻢَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্যে আটকে রেখো না। আরযারা এ ধরণের জঘন্যতম অন্যায় করবে তারা নিজেদের উপরই জুলুমকরবে।” (সূরা বাকারা : আয়াত ২৩১)

বার্ধক্যেও নারীর সম্মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম:বার্ধক্যে নারীদের দায়িত্ব সন্তানদের উপর অর্পন করা হয়েছে। ইরশাদহয়েছে,ﻭَﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺍﻹِﻧْﺴَـٰﻦَ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﺣُﺴْﻨﺎً“আর আমি মানুষদেরকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদাচারণেরনির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৮)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,ﻭَﺍﺧْﻔِﺾْ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﺟَﻨَﺎﺡَ ﺍﻟﺬُّﻝِّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﻗُﻞْ ﺭَﺏِّ ﺍﺭْﺣَﻤْﻬُﻤَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺑَّﻴَﺎﻧِﻲ ﺻَﻐِﻴﺮًﺍ“আর তুমি তাদের (তোমার পিতা-মাতার) সামনে দীনতার পক্ষপুটকেবিছিয়ে দাও। আর বলো যে, হে আমার রব! আপনি তাদের উপর রহম করুন,যেমন তারা আমার উপর বাল্যকালে রহম করেছেন। ” (সূরা বনী ইসরাঈল :আয়াত ২৪)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,ﻭَﺇِﻥ ﺟَـٰﻬَﺪَﺍﻙَ ﻋَﻠَﻰٰ ﺃَﻥ ﺗُﺸْﺮِﻙَ ﺑِﻰ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻚَ ﺑِﻪِ ﻋِﻠْﻢٌ ﻓَﻼَ ﺗُﻄِﻌْﻬُﻤَﺎ ﻭَﺻَـٰﺤِﺒْﻬُﻤَﺎ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻣَﻌْﺮُﻭﻓﺎً“আর তাঁরা যদি তোমাকে আমার সাথে শিরক করার এমন বিষয়ের বাধ্যকরে তোমাদের কাছে যার জ্ঞান নেই, তবে (সেক্ষেত্রে) তুমিতাঁদের অনুসরণ করো না। তবে তাঁদের সাথে দুনিয়াতে সৎব্যবহার এবংসদাচারণ বজায় রাখো।” (সূরা লুকমান, আয়াত ১৫)


অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের উপর নারীকে অগ্রাধিকার দিয়েছে ইসলামপিতা-মাতার সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনার ক্ষেত্রেও ইসলামনারীদেরকে অগ্রাধিকার ও অধিক সম্মান দিয়েছে। পিতার থেকেমাতার সম্মান ও মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

নিম্নোক্ত হাদীসথেকে যা পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে।ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪﻣﻦ ﺃﺣﻖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺤﺴﻦ ﺻﺤﺎﺑﺘﻲ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ ,, ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ , ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ ,ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﺑﻮﻙ . ‏(ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একবার জিজ্ঞাসাকরা হলো যে ইয়া রাসূলাল্লাহ! পিতা-মাতার মধ্যে আমার কাছেসবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার হকদার কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেসকরলেন, তারপর কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে?প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমারমা। এরপর সাহাবী চতুর্থ বার যখন জিজ্ঞেস করলেন যে, তারপর কে?তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন,তোমার বাবা।” (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদীসের দ্বারা এটা পরিস্কার হয়ে গেলো যে, নারীজাতিকে ইসলাম মাতৃত্বের উচ্চাসনে বসিয়েছে। তাদেরকে সম্মান ওমর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছে।এছাড়াও অনেক হাদীস আছে যেখানে শুধু মাতার কথাই বলা হয়েছে।যেমন এক হাদীসে রাসূল সা. বলেন,ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺟﺎﻫﻤﺔ ﺃﻧﻪ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺭﺩﺕ ﺃﻥ ﺃﻏﺰﻭ، ﻭﺟﺌﺖﺃﺳﺘﺸﻴﺮﻙ ؟ ﻓﻘﺎﻝ : "ﻫﻞ ﻟﻚ ﻣﻦ ﺃﻡ " ؟ ﻗﺎﻝ ﻧﻌﻢ : ﻗﺎﻝ : " ﻓﺎﻟﺰﻣﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺗﺤﺖ ﺭﺟﻠﻴﻬﺎ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲহযরত মুয়াবিয়া বিনতে জাহিমা নবীজীর সা. এর কাছে এসে বললেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাচ্ছি। আপনার কাছেপরামর্শের জন্য এসেছি। তিনি বললেন, তোমার মা আছে কি? সে বলল,হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাঁকে সঙ্গ দাও। কেননা জান্নাত তাঁর দুইপায়ের নিচে।” (সুনানে নাসাঈ )


সমাজে কেউ যেনো নারী জাতির অবমাননা করতে না পারেসেটিও ইসলাম নিশ্চিত করেছে। অন্যায়ভাবে কেউ কোনো নারীকেঅপবাদ দিলে তার জন্য শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺮْﻣُﻮﻥَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕِ ﺛُﻢَّ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺗُﻮﺍ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻌَﺔِ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ ﻓَﺎﺟْﻠِﺪُﻭﻫُﻢْ ﺛَﻤَﺎﻧِﻴﻦَ ﺟَﻠْﺪَﺓً ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﺒَﻠُﻮﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓً ﺃَﺑَﺪًﺍﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ“আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারাচারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাতকর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলোফাসিক।” (সুরা আন-নূর: আয়াত ৪)

আমল ও সওয়াবের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে সমান করেছে ইসলাম:এভাবে নারীদেরকে দুনিয়ার জীবনে নিশ্চিত, নিরাপদ করার পরপরকালীন জীবনেও তাদের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গলের কথা ঘোষণাকরেছে। এক্ষেত্রে পুরুষ-নারী বলে কাউকে আলাদা করা হয় নি।ইরশাদ হয়েছে,ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﻠَﻨُﺤْﻴِﻴَﻦَّﻩُ ﺣَﻴَﺎﺓً ﻃَﻴِّﺒَﺔً ﻭَﻟَﻨَﺠْﺰِﻳَﻦَّﻫُﻢْ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﺄَﺣْﺴَﻦِ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকেপবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমিতাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।” (সুরা আন-নাহল: আয়াত ৯৭)

আরো ইরশাদ হয়েছে,ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﻠَﻨُﺤْﻴِﻴَﻦَّﻩُ ﺣَﻴَﺎﺓً ﻃَﻴِّﺒَﺔً ﻭَﻟَﻨَﺠْﺰِﻳَﻦَّﻫُﻢْ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﺄَﺣْﺴَﻦِ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ . ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻌْﻤَﻞْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤَﺎﺕِ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺜَﻰ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻈْﻠَﻤُﻮﻥَ ﻧَﻘِﻴﺮًﺍ“আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায়যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদেরপ্রতি খেজুরবীচির আবরণ পরিমাণ যুল্ম ও করা হবে না।” (সুরা নিসা:আয়াত ১২৪)
অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,ﺃَﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃُﺿِﻴﻊُ ﻋَﻤَﻞَ ﻋَﺎﻣِﻞٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺜَﻰ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺾٍ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন পুরুষ অথবা মহিলা আমলকারীর আমল নষ্টকরব না। তোমাদের একে অপরের অংশ। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৯৫)

সুরা আল আহযাব এর ৩৫নং আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:ﺃَﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃُﺿِﻴﻊُ ﻋَﻤَﻞَ ﻋَﺎﻣِﻞٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺫَﻛَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺜَﻰ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺾٍ. ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﻘَﺎﻧِﺘِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻘَﺎﻧِﺘَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺩِﻗِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺩِﻗَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮِﻳﻦَ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺨَﺎﺷِﻌِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﺨَﺎﺷِﻌَﺎﺕِﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﺼَﺪِّﻕَﻦﻳِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﺼَﺪِّﻕِﺕﺍَ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﻓِﻈِﻴﻦَ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢْ ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﻓِﻈَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﺬَّﺍﻛِﺮِﻳﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍﻭَﺍﻟﺬَّﺍﻛِﺮَﺍﺕِ ﺃَﻋَﺪَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻬُﻢْ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓً ﻭَﺃَﺟْﺮًﺍ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী,সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী,দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদেরলজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিকস্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহানপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।” (সুরা আহযাব: আয়াত ৩৫).

নারী জীবনের প্রত্যেক পর্যায় সম্পর্কে উপরে বর্ণিত সুন্দর ও সুনিপুনব্যবস্থাপনা দিয়ে ইসলাম নারী জাতির পুরো জীবনটিকেইএকেবারে সহজ, সুন্দর, নিরাপদ ও নির্ভাবনার করে দিয়েছে। কন্যাসন্তানের জন্য বিবাহের আগ পর্যন্ত যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ইসলাম তারপিতার উপর ন্যস্ত করেছে। বিবাহের মাধ্যমে তার দায়িত্ব অর্পনকরেছে স্বামীর উপর। এরপর মাতা হিসেবে তার দায়িত্ব দিয়েছেসন্তানের উপর।এমন সুন্দর ব্যবস্থা কারো ক্ষেত্রে কোনো পর্যায়ে বিঘ্নিত হলেসেজন্য আগে থেকেই রিজার্ভ ফান্ডেরও ব্যবস্থা রেখেছে পিতা-মাতার কাছ থেকে ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ, স্বামীর কাছথেকে প্রাপ্য মোহরানা এবং নিজের উপার্জিত যাবতীয় সম্পদস্বাধীনভাবে ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে। স্বামীদের উপর নিজস্ত্রীদের জন্য মহরানা প্রদান বাধ্যতামূলক করে ঘোষণা করেছে,ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﺻَﺪُﻗَﺎﺗِﻬِﻦَّ ﻧِﺤْﻠَﺔً“আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়েদাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)

ইসলাম নারীর আর্থিক স্বাবলম্বীতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষপ্রয়োজনে শরীয়তের সীমা ঠিক রেখে নারীকে কর্মস্থলে যাওয়ারওঅনুমতি দিয়েছে। ইসলাম নারীর নিজের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্বপিতা, স্বামী, সন্তানের উপর ন্যস্ত করলেও; নারীর নিজের আয়,নিজের সম্পত্তি কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সেখান থেকেঅর্জিত মুনাফা ইত্যাদির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতা দিয়েছেনারীর হাতে। এক্ষেত্রে জোর করে অন্য কারো জন্য সম্পদ গ্রাসকরাকেও হারাম করেছে।ইসলামী সমাজব্যবস্থায় নারীর সম্মান ও মর্যাদাপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্য - তথা সমগ্র বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন একটিসমস্যা। কিন্তু এ সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনায় এমনভাবে এ ব্যাপারটিকেউপস্থাপন করা হয় যেন এটি শুধুমাত্র মুসলিম বিশ্বেরই একটি সমস্যা আর এরকারণ হিসেবে সব সময় দায়ী করা হয় ইসলামকে। ইসলামে নারীরঅধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা সমাজে প্রচলিতআছে। যেমন:- ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে নারী নির্যাতন করার অধিকার।- নারীর নেই শিক্ষা গ্রহণ, রাজনীতি কিংবা অর্থনৈতিককর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অধিকার।- নারীর নেই কোন বিষয়ে নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার।- নারীর নেই স্বামী নির্বাচন বা তালাকের অধিকার।- হিজাব বা পর্দাপ্রার মূল উদ্দেশ্য নারীদের অবরুদ্ধ করা।- হিল্লা বিয়ে, গ্রামগঞ্জের মোলাদের অন্যায় ফতোয়া, অনারকিলিং ইত্যাদি ইসলাম অনুমোদিত বিষয়।কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, উপরোক্ত কোন প্রচারণার সাথেই নেইইসলামের দূরতম সম্পর্ক। এখন থেকে চৌদ্দ'শত বছর আগে ইসলাম নিষিদ্ধকরেছে সকল প্রকার নারী নির্যাতন। উপযুক্ত সম্মানের সাথে নিশ্চিতকরেছে নারীর সুষ্পষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার।কিন্তু, আজ সমস্ত বিশ্বব্যাপী ইসলামী রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে নারীবঞ্চিত হয়েছে তার আল্লাহ্ প্রদত্ত সকল অধিকার থেকে।ইসলাম নারীদের ভূমিকাকে যথার্থ সম্মান দিয়েছে। একটু বিশ্লেষন ওগবেষনা করলেই আমরা দেখবো মা, স্ত্রী ও কন্যা হিসেবে অথবাএকজন পেশাজীবি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনকারী হিসেবেকীভাবে ইসলাম নারীদের মর্যদাকে সুউচ্চ করেছে।১. সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি: পুঁজিবাদী সমাজে মূলতঃ নারীরসম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে নারীর দৈহিক সৌন্দর্য ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠা। আর ইসলামী সমাজে নারীর সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠিহচ্ছে তার আলাহ্ভীরুতা বা তাকওয়া।

 রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "এইপৃথিবী এবং এর মধ্যস্থিত সমস্ত কিছুই মূল্যবান। কিন্তু সবচাইতে মূল্যবানহচ্ছে একজন সৎকর্মশীল নারী।" (মুসলিম)২. মাতৃত্বের সম্মান: পুঁজিবাদী সমাজ নারীর মাতৃত্বকে দেয়নি কোনসম্মান ও মর্যাদা। আর ইসলাম নারীকে মা হিসাবে করেছে সবচাইতেবেশী সম্মানিত।
 রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "মায়ের পায়ের নীচেসন্তানের জান্নাত।"৩. গৃহকর্মের মর্যাদা: পুঁজিবাদী সমাজ নারীর গৃহকর্মের মতো গুরুত্বপূর্ণকাজকে করেছে তুচ্ছতাচ্ছিল্য। আর ইসলাম নারীর গৃহের অভ্যন্তরেরগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সন্তান জন্মদান ও লালনপালন করাকে দিয়েছেজিহাদের মর্যাদা। মূলত এটিই একজন নারীর মৌলিক ও প্রধান কাজ।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "ঘরে তোমরা (নারীরা) তোমাদেরসন্তানদের যত্ন নাও আর এটাই তোমাদের জন্য জিহাদ।" (মুসনাদেআহমাদ)৪. স্ত্রী হিসাবে সম্মান: স্ত্রী হিসাবেও নারীকে ইসলাম দিয়েছেপরিপূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যেসেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর নিশ্চয়ই আমি আমারস্ত্রীর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশী উত্তম।" (তিরমিযী)৫. কন্যাসন্তানের সম্মান: পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক এই পৃথিবীতেএখনও কন্যাসন্তান অনাকাঙ্খিত। অথচ ইসলাম উত্তম রূপে কন্যা সন্তানলালন-পালন করাকেও ইবাদত হিসাবে গণ্য করেছে। রাসূল (সাঃ)বলেছেন, "যে ব্যক্তির কোন কন্যা সন্তান থাকে এবং তাকে সে উত্তমশিক্ষা দেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।"৬. সর্বস্তরে নারীর সম্মান: ইসলাম সমাজের সকল স্তরের মানুষকেনারীর সাথে সম্মানজনক আচরণ করার জন্য উৎসাহিত করেছে। রাসূল(সাঃ) বলেছেন, "শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতিসম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদেরআচরণও হয় অসম্মানজনক।" (তিরমিযী)


এই হলো ইসলামে নারীর মর্যাদা আর এটা বর্তমান বিশ্বের প্রচলিতমূল্যবোধের মতো নয় যেখানে নারীদের দেখা হয় কেবল মাত্র যৌনতার প্রতীকরূপে এবং ভোগের উপাদান হিসেবে। এর ফলশ্রুতিতেপ্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।









No comments:

Post a Comment